বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা:শারদোৎসব নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশের পরই পশ্চিমবাংলার সচেতন মানুষের মুখে হাসি ফুটেছে, তেমনই তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে সরকার ও প্রশাসনিক মহলে। এই রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে কী সিদ্ধান্ত নেবে সরকার, তা এদিন রাত পর্যন্ত নবান্নের তরফে জানানো হয়নি। তবে সরকারি আধিকারিকদের সঙ্গে রাজ্যের মন্ত্রীদের বৈঠক চলছে। সরকার অবশ্য এই রায়ের বিরুদ্ধে ফের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করতে পারে। সেখানেও একই রায় বহাল থাকতে শীর্ষ আদালত বা সুপ্রিম কোর্টে যেতে পারে। তবে সরকার কী করতে চাইছে, তা জানা যায়নি। কিন্তু রায় নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন মহলে জোর চর্চা শুরু হয়ে গিয়েছে।
রাজ্যের বিরোধী দলগুলি অবশ্য হাইকোর্টের এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা লোকসভায় কংগ্রেসের সংসদীয় দলনেতা অধীর চৌধুরি বলেছেন, ‘দর্শকহীন মণ্ডপে পুজো করা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ে কিছুটা অসুবিধে হবে সকলের। এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে করোনা সংক্রমণের কথা মাথায় রেখে হাইকোর্টের নির্দেশকে মান্যতা দেওয়া উচিত।’ কিন্তু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেছেন, ‘উৎসবের আবেগকে কাজে লাগিয়ে করোনা–বিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে যে রাজনীতি হচ্ছিল, তাতে হাইকোর্টের নির্দেশে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ হবে।’ পুজোর আবেগকে কাজে লাগিয়ে ৫০ হাজার টাকা অনুদানের বিষয়টি নিয়েও তিনি কটাক্ষ করেন। আদালতের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে বিজেপিও। এই প্রসঙ্গে দলের নেতা সায়ন্তন বসু বলেছেন, ‘রাজ্য সরকার দুর্গাপুজো নিয়েও রাজনীতি করতে চাইছে। তাই পুজো কমিটিগুলিকে ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
তবে কলকাতার প্রশাসক তথা মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এই রায় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেছেন, ‘আমি কেবলমাত্র একটি ক্লাবের সভাপতি। গোটা বাংলা জুড়ে দুর্গাপুজো হয়। তাই এই বিষয়ে আমি একক ভাবে কোনও মন্তব্য করতে পারি না। দল কিংবা সরকারই এই বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘এবার চেতলা অগ্রণী ক্লাবের পুজো বাড়িতে বসেই দেখা যাবে। কেবল মাত্র নেটের মাধ্যমে প্রতিমা দর্শন করাই নয়, যাঁরা চাইবেন, তাঁদের বাড়িতে মায়ের ভোগও পৌঁছে দেওয়া হবে।’ কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘আদালতের নির্দেশ না মানলে আরও বড় বিপদ আসতে পারে।’
এদিকে, এত কম সময়ে দর্শকহীন পুজোর আয়োজন কী করে করা হবে, তা নিয়ে উদ্যোক্তারা চিন্তায় পড়ে গিয়েছেন। অবশ্য কলকাতার বেশ কিছু পুজো আগেই জানিয়ে দিয়েছিল, তাদের মণ্ডপে দর্শকের প্রবেশ করা যাবে না। ইন্টারনেটে পুজো দেখতে পাবেন সকলে। তারা এদিন হাইকোর্টের রায়কে স্বাগতই জানিয়েছে। কিন্তু অবশিষ্ট পুজো উদ্যোক্তারা এখন তাকিয়ে রয়েছেন সরকারি নির্দেশের দিকে। সরকার এবং প্রশাসন যে নির্দেশ দেবে, সেই অনুযায়ী অধিকাংশ পুজো উদ্যোক্তা সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।